চোখের চিকিৎসায় চরম সংকটে রাজবাড়ী: নেই কোনো সরকারি চক্ষু চিকিৎসক

- আপডেট সময় : ০২:৪৯:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষের বসবাস রাজবাড়ী জেলায়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন রোগ নিয়ে জেলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চোখের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা চরম ভোগান্তির মুখে—কারণ পুরো জেলাজুড়ে কোনো সরকারি হাসপাতালে নেই একজনও চক্ষু চিকিৎসক।
রোববার (২৯ জুন) রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আগে দুইজন চক্ষু চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। নিয়মিত চোখের অপারেশনও হতো এখানে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই দুই চিকিৎসক একযোগে বদলি হয়ে গেলে থেকে হাসপাতালটি চক্ষু বিশেষজ্ঞশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় চক্ষু বিভাগ এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় এখানে প্রতিমাসে গড়ে ২০০টি চক্ষু অপারেশন হতো। কিন্তু এখন দ্বিতীয় তলার ‘চক্ষু কনসালটেন্ট’ কক্ষে ঝুলছে তালা, রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে।
জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স—বালিয়াকান্দি, পাংশা, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও সদর—এর কোনো কমপ্লেক্সেই নেই চক্ষু চিকিৎসক।
সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভাজনচালা গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন চোখে পানি পড়ার সমস্যায় চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। কিন্তু টিকিট কাউন্টারে জানানো হয়, চক্ষু চিকিৎসক নেই। হতাশ হয়ে তিনি বলেন, “বাইরের ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে গেলে শুধু ফিসেই ৮০০ টাকা লাগে। এতো টাকা কোথা থেকে আনব?”
সদর উপজেলার রামকান্তপুরের বাসিন্দা আব্দুল মতিন মোল্লার অভিজ্ঞতাও একই। তিনি বলেন, “চোখে লোহা ঢুকে রক্ত জমে গিয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। প্রথমবারেই দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে, আবার যেতে বলেছে।”
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. এবাদত হোসেন জানান, সেখানে চক্ষু চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। তবে ‘কমিউনিটি আই কর্নার’ এর মাধ্যমে কিছু প্রাথমিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রয়োজন হলে অনলাইনের মাধ্যমেও পরিচালিত হয়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল হান্নান বলেন, “হাসপাতালে ১৮টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে চক্ষু বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। এতে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ বলেন, “জেলার অনেক চিকিৎসক পদই শূন্য। তবে সবচেয়ে সংকট চক্ষু চিকিৎসকে। বিষয়টি খুবই জরুরি। আমরা শূন্য পদে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন নিয়োগ হলে এই সংকট কেটে যাবে।”