বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক সাফল্য, বিশ্বমঞ্চে গর্বিত করল উদ্ভাবনী দল

- আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে দেশের একদল তরুণ উদ্ভাবক। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল বিশ্বমঞ্চে পুরস্কার অর্জন করেছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তাদের এই সম্মাননা অর্জন দেশের জন্য এক অনন্য গৌরব।
কোন প্রতিযোগিতা ও কী উদ্ভাবন?
উক্ত প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরে আয়োজিত “ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং ইনোভেটরস সায়েন্স এক্সপো ২০২৫” শীর্ষক আয়োজনে। সেখানে বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের তরুণ উদ্ভাবকরা নিজেদের প্রকল্প উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUST) ‘টিম নেক্সাস’ নামে পরিচিত একটি দল। তারা পরিবেশবান্ধব একটি “স্মার্ট বায়োফিল্টারিং সিস্টেম” উদ্ভাবন করে, যা কারখানার বর্জ্য পানি পরিশোধন করে নিরাপদে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
প্রযুক্তিটির মাধ্যমে স্বল্প খরচে শিল্প বর্জ্য ফিল্টার করা যাবে, যা নদী ও জলাধারে দূষণ কমাতে কার্যকর হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
টিম নেক্সাস তাদের উদ্ভাবনের জন্য প্রতিযোগিতার ‘বেস্ট গ্রিন টেক ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. হুয়াং ঝাও বলেন,
“বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন বাস্তবিক অর্থেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর একটি সমাধান। আমরা এমন উদ্ভাবনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।”
তরুণদের অনুভূতি
দলের সদস্য ও প্রকল্প প্রধান, বুশরা সুলতানা বলেন,
“এই সম্মান শুধু আমাদের নয়, পুরো বাংলাদেশের। আমরা চাই, আমাদের প্রযুক্তিটি বাস্তবে প্রয়োগ করে দেশের নদী-নালাগুলোকে দূষণমুক্ত করা হোক।”
অন্য সদস্য আরাফাত হোসেন বলেন,
“আমরা প্রমাণ করেছি— সুযোগ পেলে বাংলাদেশের তরুণরাও বৈশ্বিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করতে পারে।”
সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এক বিবৃতিতে বলেছেন,
“এই অর্জন দেশের তরুণদের জ্ঞান, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির সাক্ষ্য দেয়। আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করুক এবং তরুণদের গবেষণামূলক প্রকল্পে উৎসাহিত করুক।”
বুস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন,
“আমাদের শিক্ষার্থীদের এই সফলতা প্রমাণ করে, তরুণদের মেধাকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এই দৃষ্টান্ত বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশ্লেষকদের মতামত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাড়াতে হলে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা তহবিল, ল্যাব অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন,
“এই অর্জন বাংলাদেশের তরুণদের বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভাবনের সক্ষমতা রাখে তা প্রমাণ করেছে। আমাদের উচিত, এদের সাপোর্ট দেওয়া এবং উদ্ভাবনকে বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।”