টানা বৃষ্টিতে দীঘিনালা-লংগদু সড়ক পানিতে ডুবে, নৌকায় পারাপার হাজারো মানুষ

- আপডেট সময় : ০৫:০৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
টানা বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দীঘিনালা-লংগদু সড়কে দুই দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। সোমবার (২ জুন) খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শালবন, কুমিল্লাটিলা, সবুজবাগসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার প্রধান নদী ও খালগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দীঘিনালার মাইনী নদীর তীরবর্তী বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের মেরুং ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টার স্টিল ব্রিজ এলাকা সহ একাধিক স্থানে পানি উঠে গেছে। ফলে রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা নৌকায় করে পারাপার হচ্ছেন। এ সময় লংগদু ও মেরুংগামী বেশ কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে বলেও জানা গেছে।
মেরুং ইউনিয়নের সোবাহানপুর, চিটাগাংইয়াপাড়া, হাজাছড়ার একাংশ, কুমিল্লাপাড়া, ৩ নম্বর কলোনি ও মেরুং বাজার সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চিটাগাংপাড়া এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ছোট মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছোবাহানপুর আরএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও আরও কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় হাজারো মানুষ এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় জেলার প্রধান তিন নদী—ফেনী, চেঙ্গি ও মাইনী নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি দেখা দিলেও এখনও অনেক নিম্নাঞ্চল পানির নিচে রয়েছে। নতুন করে পাহাড়ধসের খবর না মিললেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মাটি এখনও ভিজে থাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা সম্মিলিতভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয় রয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে হেল্পলাইন চালু রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালেও খাগড়াছড়ির আকাশ মেঘলা ছিল এবং থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আবারও জটিল করে তুলতে পারে।
জেলা সদরের শালবাগান এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, “পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”