গোপন ‘স্বর্ণখনি’: কুষ্টিয়ার নদীজুড়ে বালু বাণিজ্যে কোটি টাকার লেনদেন, রাজস্ব যাচ্ছে হাতছাড়া

- আপডেট সময় : ০৮:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে
কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদীজুড়ে চলা বালু উত্তোলন যেন এক অব্যক্ত সোনার খনি। বছরে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার বালু বেচাকেনা হলেও সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা। দৃশ্যমানভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র দুইটি পয়েন্টে, অথচ কার্যত ২১টি স্থান থেকেই প্রতিনিয়ত উত্তোলন চলছে। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা, পরিবেশগত উদ্বেগ, এমনকি বর্ষাকাল—কোনো কিছুই থামাতে পারেনি এই দৌরাত্ম্য।
নদীতীরজুড়ে এই বালুরাজ্য চলে অস্ত্রধারী পাহারার ছায়ায়। দিনে ও রাতে চলছে অবিরত উত্তোলন—অধিকাংশ এলাকাতেই যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরাসরি না থাকলেও থাকছেন অদৃশ্য উপস্থিতিতে। তারা নিজেরা মাঠে না নামলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন গোটা কার্যক্রম। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতাদের নামও উঠে এসেছে বালু ঘাটের পরিচয়দানকারী হিসেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাউন্ডেশনের নিচ থেকে বালু তোলায় ঝুঁকিতে পড়েছে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। অথচ প্রশাসন অনেক সময় প্রকাশ্যে থাকা অবৈধ উত্তোলনকেও অস্বীকার করছে বা খণ্ডিত ভাষায় ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, তিন ধরনের বালু থেকে প্রতিদিন শুধু একটি ঘাটেই চলে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার লেনদেন। এই হিসাবে পুরো জেলার বালু ঘাটগুলো থেকে বছরে আদায় হয় প্রায় দুইশ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। অথচ সরকারি হিসাব বলছে, গেলো বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কেউই স্পষ্টভাবে দায় স্বীকার করছেন না। কেউ বলছেন, ‘চুরি হলে তো সেটা চুরিই’, কেউ আবার বলছেন, ‘আমরা কাজ করছি’। প্রশাসনের এই অস্পষ্ট অবস্থানের সুযোগেই গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বালু সিন্ডিকেট। স্থানীয়রাও বলছেন, এই এলাকা যেন ‘এল ডোরাডো’, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্ষমতাবান কিছু গোষ্ঠী।
উচ্চমূল্যের এই সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নেই বলেই একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও নদী, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। আর সড়কে বালুবোঝাই ট্রাকের জন্য বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা। সব মিলিয়ে, কুষ্টিয়ার এই নদীজুড়ে বালুর লুকানো রাজনীতিই যেন এখন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।