ব্যবসায়িক ও পারিবারিক দ্বন্দ্বে খুলনায় ব্যবসায়ী বাবলু দত্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য ফাঁস, গ্রেফতার দুই

- আপডেট সময় : ০১:০১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
খুলনার হরিণটানা এলাকায় ব্যবসায়ী বাবলু দত্তকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (২৮ জুন) হরিণটানা থানা পুলিশ বাবলুর ব্যবসায়িক অংশীদার সুমন শেখ ও তার সহযোগী মুক্তি মোল্যাকে আটক করে। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত দুটি চাপাতি, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত বাবলু দত্ত (৫০) ও তার ছেলে দিপু দত্ত ইট, বালু, সিমেন্ট ও কাপড়ের ব্যবসা যৌথভাবে পরিচালনা করতেন। গ্রেফতার সুমন শেখ তার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। যদিও সুমন মুসলিম ধর্মাবলম্বী, বাবলুর পরিবারের সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়ের ছদ্মবেশে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সুমন বাবলুর স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে বাবলু বাধা দেন, যা থেকে মনমালিন্যের সূত্র ধরে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
ঘটনার দিন ২৬ জুন সন্ধ্যা ৮টা ৩৫ মিনিটে বাবলু দত্ত তার দোকান থেকে মোটরসাইকেলে বের হন। পরবর্তীতে তিনি নিখোঁজ হন। রাত ১১টার দিকে স্থানীয় এক বাসিন্দা বাবলুর মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর আশপাশ খোঁজাখুঁজি চালিয়ে মেহগনি বাগানের ভেতর থেকে গলা কাটা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ২৭ জুন মামলাটি দায়ের হওয়ার পর হরিণটানা থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কৈয়া বাজার ও ফুলতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুমন শেখ ও মুক্তি মোল্যাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজবাঁধ দক্ষিণপাড়ার একটি খাল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ধারালো চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার খন্দকার হোসেন আহমেদ জানান, হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূলত পারিবারিক স্বার্থ ও প্রতারণা এবং অবৈধ সম্পর্কের দ্বন্দ্ব রয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে। তিনি আরও জানান, সুমন শেখের বিরুদ্ধে পূর্বে দুইটি মামলা রয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের পরিচিত ও পারিবারিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে একজনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত। পুলিশের দ্রুত অভিযান ও রহস্য উদঘাটনের ফলে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন স্থানীয়রা, তবে হত্যার পুরো চক্র ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।