রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক স্পট থেকে কোটি টাকার মাসোহারা! অভিযুক্ত ডিএনসি পরিদর্শক রায়হান

- আপডেট সময় : ০৭:২০:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে
‘মাদকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশের প্রতিটি এলাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তবে এই ভিশন বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, যাঁরা নিজের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে মাদক চক্রের সাথে গোপনে আঁতাত করে বিপুল পরিমাণ ঘুষ ও মাসোহারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের এমন অপকর্মে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ জনগণও পড়ছে হয়রানির মুখে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ডিএনসি পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ—তিনি এলাকায় মাদক কারবারিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মাসোহারা নেন। শুধু মাসোহারা নয়, বিরোধী মতের রাজনীতিকদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে পরিদর্শক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই রায়হান আহমেদ খান নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিএনপির রাজনীতিকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন, মাদক স্পট থেকে বিপুল অঙ্কের মাসোহারা তোলেন এবং সাধারণ মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে অধিক পরিমাণ মাদক দেখিয়ে মামলা সাজান।
রায়হান প্রতি মাসে থিম ওমর প্লাজার পাশে এক দোকান থেকে প্রায় ২৭ হাজার টাকার বিদেশি সিগারেট কেনেন। থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে (মায়াবন, সৃষ্টিসেন্ট্রাল স্কুলের পাশে) এবং চড়েন প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়িতে। তার এসব বিলাসী খরচের উৎস নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছেন, এটি তার মাসোহারা ও মাদক সিন্ডিকেট থেকে পাওয়া টাকারই প্রতিফলন।
মাদক নিয়ে সিন্ডিকেট ও বাণিজ্য
স্থানীয়দের দাবি, ডিএনসি রায়হান দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। অভিযানে জব্দ হওয়া আসল মাদক সরিয়ে ‘মেডি’ নামের এক ধরনের ভেজাল দ্রব্য দিয়ে চালান করা হয়, আর আসল মাদক গুড়িপাড়ায় বিক্রি করা হয়।
এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি শুধুমাত্র গাঁজা সেবন করতেন, কিন্তু তাকে হেরোইন দিয়ে মামলা দেওয়া হয়। অন্য একজন বলেন, তাকে আটক করে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়, টাকা না দিলে মামলা দেওয়া হয়।
ভয়াবহ হয়রানির উদাহরণ
সম্প্রতি গোদাগাড়ীর পরমান্দপুর এলাকার বাসিন্দা পিয়ারুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে ‘পলাতক আসামি’ বানানো হয়। অথচ তিনি চরে কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকেন ও অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না। অভিযানের সময় তার স্ত্রী, শিশু সন্তান ও দুই প্রতিবেশীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পিয়ারুলের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী যদি দোষী হন, তাকে শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের কেন নির্যাতন করা হলো?”
সংবাদ প্রকাশের পর আরও দু’বার পিয়ারুলের বাড়িতে যায় ডিএনসি টিম। সেই সঙ্গে রায়হান আহমেদ খান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানান—যা একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দেয়।
তথ্য গোপন ও অনিয়ম
২০২৩ সাল থেকে রাজশাহী ডিএনসি অনলাইনে নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন শুধু আটক ব্যক্তিদের নাম ছাড়া অন্য কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য দেওয়া হয় না। এতে করে জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি উধাও হয়ে গেছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
অভিযোগ জানতে চাইলে পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খান বলেন, “আমি ফোনে কোনো মন্তব্য দেব না, সাক্ষাতে আসলে কথা বলবো।”
রাজশাহী ডিএনসি’র উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, “আমি এখন জুম মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলবো।” পরে বারবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
উপসংহার
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে চলছে অবাধ অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার। সাধারণ মানুষ আজ মাদক চক্রের বদলে ভুক্তভোগী হচ্ছে অসাধু কর্মকর্তাদের হাতেই। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ দাবি করছে। রায়হান আহমেদ খানের মতো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি—না হলে ‘মাদকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন কেবলই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে।