উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। এর মধ্যে আটজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে একাধিক দপ্তর ও হাসপাতালের সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, ভোর ৫টার দিকে ৯ বছরের শিশু বাপ্পি আইসিইউতে মারা যায়। তার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এর আগে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মারা যায় চার শিক্ষার্থী—এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) ও সায়ান ইউসুফ (১৪)। এদের শরীরের ৮৫-১০০ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ ছিল।

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৪১ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে সোমবার রাত দেড়টায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় আটজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহতদের পরিচয়:

ফাতেমা আক্তার (৯), বাগেরহাট

সামিউল করিম (৯), বরিশাল

রজনী ইসলাম (৩৭), কুষ্টিয়া

মেহনাজ আফরিন হুরায়রা (৯), টাঙ্গাইল

শারিয়া আক্তার (১৩), ঢাকা

নুসরাত জাহান আনিকা (১০), ঢাকা

সা’দ সালাউদ্দিন (৯), ঢাকা

সায়মা আক্তার (৯), গাজীপুর

আইএসপিআর জানিয়েছে, নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ এখনো মর্গে রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, পরিবারের অনুরোধে এবং আইনগত সুরতহালের পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।

দুর্ঘটনার বিবরণ:

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজজিআই (৭০১) মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। তৎক্ষণাৎ বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং স্কুলের একাংশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছিল।

এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ প্রায় ১৭১ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় আইএসপিআর। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শোকের ছায়া:

সরকার দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ (২২ জুলাই) সারা দেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। নিহত ও আহতদের জন্য দেশের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হচ্ছে।