নোয়াখালীতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ১২:৩৬:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫ ২৯ বার পড়া হয়েছে
নোয়াখালী সদর উপজেলার ১৯ নং পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ড রামানন্দী গ্রামে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের জেলে পাড়ায় এ অভিযোগের ঘটনা প্রকাশ পায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর আব্দুল বাসেক তার ছেলে মোঃ রাশেদুল ইসলাম (০৮) কে আলেম হওয়ার জন্য স্থানীয় রামানন্দী আমিনিয়া আনছারিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার (প্রকাশ ইয়াসিন মাওলানার মাদ্রাসা) প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। ভর্তি করানোর কিছুদিন পরেই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান সাইমুনের কুনজর পড়ে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র রাশেদের উপর। ওস্তাদের কথা না শুনলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে বলে ভয় দেখিয়ে রাশেদকে বিগত ৪ মাস ধরে বলাৎকার করে আসছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সাজ্জাদুর রহমান সাইমুন শিশু রাশেদকে তার শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন অঙ্গে হাত বুলিয়ে বলাৎকারের চেষ্টা করে। পরে ঘটনাটি তার বাবা আবদুল বাসেক জানতে পেরে স্থানীয় রাজুকে সাথে নিয়ে অভিযুক্ত সাইমুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সাইমুন ঘটনাটি স্বীকার করে রাশেদের বাবা আবদুল বাসেক ও রাজুর পা ধরে খুব কান্না কাটি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে তার মানসম্মান ও মাদ্রাসার ক্ষতিসাধন হবে জানিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে এমন ন্যক্কারজনক কাজ করবে না বলে ক্ষমা চায়।
আব্দুল বাসেক জানান, সাজ্জাদুর রহমান সাইমুন রমজানের শুরুলগ্ন থেকে পূণরায় তার ছেলেকে দিয়ে তার শরীর ও বিশেষ অঙ্গ ম্যাসাজ করতে থাকে। রাশেদ ম্যাসাজ করতে ইতস্তবোধ করলে অভিযুক্ত সাইমুন তাকে ওস্তাদের কথা না শুনলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে বলে ভয় দেখিয়ে পুরো রমজান মাসে একাধিকবার বলাৎকার করে। এক পর্যায়ে রাশেদ দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবুও জাহান্নামের ভয়ে তার ওস্তাদের এমন কর্মকান্ডের কথা কাউকে জানায়নি। এদিকে রাশেদের অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি তার দাদি জানতে পেরে সাইমুনের কাছে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য ছুটি চায়। বাড়িতে গেলে পড়ালেখা হবেনা জানিয়ে সাইমুন তার দাদিকে ফিরিয়ে দেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকল শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলেও সাইমুন রাশেদকে ছুটি দেননি। পরে তিনি হুজুরের সাথে রাগারাগী করে রাশেদকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দৈনন্দিন রাশেদ আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আব্দুল বাসেকের স্ত্রী সায়েরা বেগম তার বাবার বাড়িতে রাশেদকে পাঠিয়ে দেন। রাশেদ তার নানুর বাড়িতে গিয়ে তার নানুর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। রাশেদের নানু সায়েরা বেগমকে বিষয়টি খুলে বললে সায়েরা বেগম তার স্বামী বাসেককে ঘটনাটি জানান। তাৎক্ষণিক আব্দুল বাসেক স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে অভিযুক্ত সাজ্জাদুর রহমান সাইমুনকে জিজ্ঞাসা করলে সাইমুন আমতা আমতা করতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে জরুরী কল ৯৯৯ এ ফোন দেয়। ৯৯৯ এর কল পেয়ে নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানার ডিউটিরত অফিসার তাদেরকে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন। এরই মাঝে সুযোগ বুঝে সাইমুন ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে রামানন্দী আমিনিয়া আনছারিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইয়াসিন মাওলানার বসতঘরে ঢুকে ঘরের সামনের ক্যাচি গেইট আটকিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে (১০ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার বিকেলে আব্দুল বাসেক বাদী হয়ে সাজ্জাদুর রহমান সাইমুনকে আসামি করে সুধারাম মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাজ্জাদুর রহমান সাইমুন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাশেদের বাবা আবদুল বাসেক ও স্থানীয় মোসলেহ উদ্দিন (মুসা) আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন, আমি দিতে অস্বীকার করলে তারা আমার বিরুদ্ধে এমন চক্রান্ত করেন।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাস আগে সাজ্জাদুর রহমান সাইমুন লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন দাসের হাট বাজারের একটি মসজিদে ইমামতি ও মাদ্রাসায় চাকুরী করতেন। চাকুরী করা কালীন সময়ে মক্তবের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করা হয়। ঐ মামলায় ২ মাস কারাভোগের পর সে পূণরায় একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।