পাটগ্রাম থানা হামলার ঘটনায় উত্তাল লালমনিরহাট: দুই থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪

- আপডেট সময় : ০৪:০০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা, ভাঙচুর এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। পুলিশ দাবি করেছে, পাটগ্রাম থানা আক্রান্ত হওয়ার সময় পাশের হাতীবান্ধা থানাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা, যাতে করে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারে।
ঘটনার পর হাতীবান্ধা থানায় সরকারি কাজে বাধা ও হুমকির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় উপজেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলের ২৭ জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পাটগ্রাম থানায় দায়ের করা অপর মামলায় ২৭ জন নামীয় এবং সহস্রাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
হাতীবান্ধায় পুলিশের ‘অবরুদ্ধ’ থাকার অভিযোগ
হাতীবান্ধা থানা-পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে পাটগ্রাম থানায় হামলার খবর পেয়ে তিনটি গাড়ি নিয়ে সেখানে রওনা হয় একটি পুলিশ দল। তবে থানার প্রধান ফটকে পৌঁছানোর আগেই পথে ব্যারিকেডের মুখে পড়ে তারা। প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেল দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে দেয় নেতাকর্মীরা।
অবরোধকারীদের দাবি ছিল, পাটগ্রাম থানার ওসি উদ্ধারে হাতীবান্ধা থেকে যেন কোনো পুলিশ সদস্য যেতে না পারে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন-নবী বলেন, “ওরা প্রায় ২০০-২৫০ জন ছিল। গালিগালাজ করেছে, ধাক্কাধাক্কি করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে আছে।” পুলিশের ভাষ্যমতে, প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ১২টার দিকে নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
বিএনপির দাবি: দলীয় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই
এ ঘটনার পর শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি পুরো ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে। পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান রাজীব প্রধান বলেন, “ঘটনাটি ইজারাদার ও প্রশাসনের মধ্যকার বিষয়। বিএনপি দলীয়ভাবে জড়িত নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপিকে টার্গেট করছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাথরমহালের ইজারা ঘিরে ইজারাদারদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের তীব্র উত্তেজনা ছিল।
ইজারাদারের কর্মচারীদের আটক ও সাজা দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের উত্তেজনার জেরেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে দাবি করা হয়।
বিএনপি নেতারা বলেন, “দলীয় নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি কোনো অনৈতিক কাজ করে, তার দায় বিএনপি নেবে না।”
হাতীবান্ধার ঘটনার ব্যাখ্যা: ছিল কি ব্যারিকেড?
হাতীবান্ধা থানা অবরোধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি নেতা হাসান রাজীব প্রধান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি এবং কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তিনি জানেন না।
তবে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ নুরন্নবী দাবি করেন, “আমরা শুধু মামলার বিষয়ে থানায় গিয়েছিলাম। কোনো ব্যারিকেড দেইনি। ওসি দুর্ব্যবহার করায় কিছু নেতাকর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন।”
গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পাটগ্রাম থানায় হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—হাবিবুল (৪৬), মাইদুল (৩৪), রফিক (৪৯) ও আবু কালাম (৫৫)। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএনের ১০০ সদস্যও টহল ও অভিযানে নিয়োজিত রয়েছেন।
তদন্ত কমিটি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার তদন্তে জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কে এম হুমায়ুন রেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পাটগ্রাম থানা হামলা ও হাতীবান্ধায় পুলিশের কার্যক্রমে বাধার দুটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।