তুরস্কে মহানবী (সা.) ও মুসা (আ.)-কে ঘিরে বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশে চার কার্টুনিস্ট গ্রেফতার

- আপডেট সময় : ০১:৫৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
তুরস্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও নবী মুসা (আ.)-কে ঘিরে বিতর্কিত একটি কার্টুন প্রকাশ ও বিতরণের ঘটনায় অন্তত চারজন কার্টুনিস্টকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। সোমবার (৩০ জুন) স্থানীয় সময় তাদের আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুন, যেখানে এক মুসলিম ও এক ইহুদি ব্যক্তিকে ডানা ও আলোর আভা সহকারে করমর্দন করতে দেখা যায়। দৃশ্যটির পটভূমিতে বোমা পড়তে দেখা যায়।
কার্টুনটি প্রথমে পত্রিকায় ছাপা হলেও, তা দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। ইস্তাম্বুলের প্রধান পর্যটন এলাকায় শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দেন এবং শরিয়াহ আইনের দাবিতে সরব হন।
বিতর্কিত এই কার্টুনের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় তুর্কি সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া কার্টুনটিকে ‘উস্কানিমূলক ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাকস্বাধীনতার আওতাভুক্ত নয়। যারা এমন কাজ করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
তুর্কি প্রেসিডেন্সির যোগাযোগ প্রধান ফাহরেত্তিন আলতুন বলেন, “এই কার্টুন আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি একটি নিকৃষ্ট আক্রমণ।”
ঘটনাটি নিয়ে তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয় তুর্কি দণ্ডবিধির ২১৬ ধারায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রকাশ্যে আঘাত’-এর অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে কার্টুনটি প্রকাশকারী ব্যঙ্গ-পত্রিকা ‘লেমান’ জানিয়েছে, কার্টুনে কোনোভাবেই মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-কে চিত্রিত করা হয়নি। তাদের ভাষায়, “এখানে ‘মুহাম্মদ’ নামটি ইসরায়েলের হামলায় নিহত এক মুসলিম শিশুর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ইঙ্গিত করে না। মুসলিম বিশ্বে ‘মুহাম্মদ’ নামে কোটির বেশি মানুষ রয়েছেন।”
পত্রিকাটি আরও জানায়, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্যাতিত মুসলিম জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এবং তাঁদের ন্যায়বিচারের দাবিতে আলোকপাত করা—not ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা। তারপরও কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু যেভাবে আমাদের কার্টুনকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক।”
বিক্ষোভের জেরে তুর্কি পুলিশ কার্টুনিস্টদের গ্রেফতারের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভিডিওতে লেখা ছিল, “তুমি ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে পালাতে পারবে না।”
এদিকে বিক্ষোভকারীরা ইস্তাম্বুলে পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। কেউ কেউ দরজায় লাথি মারেন, কেউ উচ্চকণ্ঠে বলেন, “আমরা আমাদের নবীর জন্য জীবন দেব, জীবন নেব—কেউ আমাদের নবীর অবমাননা সহ্য করবে না।” অনেক বিক্ষোভকারী সেখানে এশার নামাজও আদায় করেন।
ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাভুত গুল জানান, কার্টুনটির সঙ্গে জড়িত চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ আটক হয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট তথ্য দেননি। তবে তিনি বলেন, “কিছু বিক্ষোভকারী উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।”
এদিকে পত্রিকার বিরুদ্ধে আরও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠী। মঙ্গলবার (১ জুলাই) নতুন করে বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে।