সেন্ট মার্টিন রক্ষায় বড় পরিকল্পনা: আসছে পরিবেশ ফি, নিষিদ্ধ হচ্ছে প্লাস্টিক

- আপডেট সময় : ০৬:৫০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে
বিস্তারিত প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন করে বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দ্বীপের নাজুক বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এবার থেকে পর্যটকদের কাছ থেকে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ফি’ আদায় এবং স্থানীয়দের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক বৈঠকে এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “সেন্ট মার্টিন একমাত্র প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রবাল দ্বীপ। এটির পরিবেশ রক্ষায় তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে।”
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দ্বীপে আগত পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায় করবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, যা দ্বীপের সংরক্ষণমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে। তবে এখনো নির্দিষ্ট করে ফি’র পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি।
এছাড়া স্থানীয়দের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৫০০ পরিবারকে হাঁস-মুরগি পালন, চিপস উৎপাদন ও কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের সহায়তায়ও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী অক্টোবর থেকে দ্বীপে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, সাড়ে ৭ কোটি টাকা বাজেটে বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যার মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দাকে সম্পৃক্ত করা হবে। দ্বীপজুড়ে ‘পরিবেশ প্রহরী’ নিয়োগ, জলবায়ু সহনশীল ধান চাষ, সুপেয় পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সাগরলতা ও কেয়া বন গঠনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) সেন্ট মার্টিনের জন্য একটি চার স্তরের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে:
জোন-১: মাল্টিপল ইউজ জোন, যেখানে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ার অনুমোদন থাকবে।
জোন-২: দক্ষিণাঞ্চলীয় সংবেদনশীল এলাকা, যা ‘বাফার জোন’ হিসেবে নির্ধারিত।
জোন-৩: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, যেখানে শর্তসাপেক্ষে স্থানীয়রা সম্পদ আহরণ করতে পারবে।
জোন-৪: কঠোর সংরক্ষিত এলাকা, যেখানে সব ধরনের কর্মকাণ্ড ও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
সিইজিআইএস-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক এইচ এম নুরুল ইসলাম জানান, পর্যটনের চাপে দ্বীপে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিদেশি গাছপালা বিস্তার লাভ করেছে, অতিরিক্ত লবস্টার ধরায় প্রজাতিটি প্রায় বিলুপ্ত, আর জাহাজের নোঙরে প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি। টেকনাফ উপজেলার ইউএনও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।