রান্নাঘরে গোসল, খাবারে ধুলা-ময়লা—রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্য ঝুঁকির ছড়াছড়ি

- আপডেট সময় : ০৭:২৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ ২৭ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীজুড়ে যত্রতত্র গড়ে ওঠা হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার তৈরির পরিবেশ এতটাই নাজুক যে, সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কোথাও খাবার খোলা অবস্থায় রেখে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা, আবার কোথাও রান্নাঘরেই চলছে গোসল ও অন্যান্য কাজ। চিকিৎসকদের মতে, এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার দীর্ঘদিন খেলে হতে পারে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজার এলাকায় সময় সংবাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় খাবার খোলা রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। রান্নাঘরের পরিবেশ আরও ভয়াবহ—কখনও সেখানে পানি জমে আছে, কখনও আবার খাবারের পাশে রাখা ময়লা আবর্জনা। অবাক করার বিষয় হলো, এই রান্নাঘরেই গোসলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজ চলছে।

ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করলে শুরু হয় অজুহাতের বৃষ্টি। কেউ বলেন, কর্মচারীরা খেয়াল রাখেনি, আবার কেউ দাবি করেন, “সব সময় খাবার ঢেকে রাখা সম্ভব না।” তবে মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে তারা তড়িঘড়ি করে খাবারে ঢাকনা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। কেউ কেউ আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন হবেন।
কয়েক মাস পর সময় সংবাদের দল আবারও ফিরে যায় সেইসব রেস্তোরাঁয়। দৃশ্যপট বদলায়নি একটুও—আবারও পুরনো সেই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এবার নতুন অজুহাত—”আমি দোকানে ছিলাম না”, “স্থান সংকটে পরিষ্কার রাখা যায় না”, ইত্যাদি।
এছাড়া রাজধানীর আরও কিছু রেস্তোরাঁয় অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রথমে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। বলা হয়, রান্নাঘর দূরে। কিন্তু পরে দেখা যায়, একই ভবনের ওপরে অবস্থিত রান্নাঘরে জমে থাকা ময়লা, দেয়ালে জমে থাকা চর্বি, অগোছালোভাবে রাখা খাবার—সবই পরিষ্কারভাবে অসচেতনতার প্রমাণ।
ব্যবসায়ীরা বলেন, “জায়গা ছোট, তাই এমন হচ্ছে। ভালো জায়গা পেলে পরিবর্তন করব।”
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ:
ব্যস্ত রাজধানীর নাগরিকদের অনেকেই এসব হোটেল-রেস্তোরাঁর ওপর নির্ভরশীল। কেউ অফিস শেষে, কেউ পথের মাঝে ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়েই এসব খাবার খেয়ে থাকেন। তারা বলছেন, “বিকল্প নেই বলেই এসব খেতে হয়। জানি অস্বাস্থ্যকর, কিন্তু উপায় কী?”

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ:
পরিস্থিতি বদলাতে হোটেল ব্যবসায়ীদের অনলাইন প্রশিক্ষণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, “একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।”
চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি:
অস্বাস্থ্যকর খাবারের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, “নিয়মিতভাবে এ ধরনের খাবার খেলে পাকস্থলী, কিডনি, লিভারসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও থাকে।”
পরামর্শ:
ডা. আয়েশা আরও বলেন, “নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে হলে যাচাই-বাছাই করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র রুচি বা চেহারা দেখে নয়, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধির দিকেও নজর দিতে হবে।”