মুরাদনগরে এক পরিবারের ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা, আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য—পুলিশ দিয়ে খোঁড়া হলো কবর

- আপডেট সময় : ১১:৪৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
বিস্তারিত:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে মাদক সংশ্লিষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে এক পরিবারের তিন সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুরো গ্রাম এখন থমথমে ও পুরুষশূন্য। ঘটনার জেরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকার পুরুষরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, ফলে নিহতদের দাফনের জন্য পর্যন্ত কবর খোঁড়ার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে কবর খোঁড়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩ জুলাই (বুধবার) সকাল ৯টার দিকে। কড়ইবাড়ী গ্রামে একদল উত্তেজিত এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল এবং মেয়ে জোনাকি আক্তারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা গুরুতর আহত হন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় মরদেহগুলো গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। তবে আতঙ্কের কারণে নিহতদের স্বজনরা কেউ মরদেহ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসেননি। পরে নিহত রুবির জামাতা মনির হোসেন এগিয়ে এসে মরদেহ গ্রহণ করেন। মৃতদের দাফনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখা যায়, কবর খোঁড়ার মতো একজন পুরুষও গ্রামে নেই। শেষ পর্যন্ত বাঙ্গরা বাজার থানার পুলিশ সদস্যরা গ্রাম পুলিশের সহায়তায় কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা করেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, “নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতের মধ্যেই মামলা দায়ের করবেন। meanwhile, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এলাকাবাসীর ভাষ্য, রুবি ও তার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনার দিন ভোরে প্রায় ৮০-৯০ জন লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। প্রথমে ইট ছুঁড়ে মারার পর তারা ঘরে ঢুকে বেপরোয়া হামলা চালায়।
নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার জানান, “হঠাৎ করে লোকজন এসে বাড়ি ঘিরে ফেলে। ইট ছুঁড়ে মারে। পরে ঘরে ঢুকে প্রথমে রুবি আম্মুকে পেটায়, পরে তার ছেলেমেয়েকেও। আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করেছি, কেউ শুনেনি।”
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকাজুড়ে এখন আতঙ্ক আর আতর—একদিকে ভয়াবহ সহিংসতার শিকার পরিবার, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে পুরুষরা। গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি এখন তালাবদ্ধ।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা।