সর্বশেষ
বিশ্ব মঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘মানবপুতুল’ নৃত্য: ওসাকা এক্সপোতে যাচ্ছে ক্ষুদে শিল্পীরা পদ্মার ইলিশ কোথায় হারাল? স্বাদের রাজা এখন নাগালের বাইরে জোঁকের তেল: গোপন শক্তি না গোপন বিপদ? কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান? “বিয়ের জন্য আপনি প্রস্তুত তো? জেনে নিন চূড়ান্ত আত্মবিশ্লেষণের ৬টি দিক” আজ মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিএমপির ডাইভারশন নির্দেশনা—এড়িয়ে চলুন এই সড়কগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক ভিসায় নতুন শর্ত: আবেদনেই জমা দিতে হতে পারে ১৮ লাখ টাকার বন্ড টাঙ্গাইলে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেফতার রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর ফজলে এলাহী গ্রেফতার বিয়ে ছিল ফাঁদ! ৮ স্বামীকে ফাঁসিয়ে কোটি টাকা হাতানো সামিরা নবম বিয়ের আগেই গ্রেপ্তার প্রেমের ফাঁদে চা, তারপর অজ্ঞান! পাত্রী গ্রেপ্তার, জব্দ হওয়া মোবাইল গেল বাংলাদেশে

মুন্সীগঞ্জে যমজ কন্যাশিশু হত্যা: স্বামীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের দায় স্বীকার করলেন মা

প্রতিবাদী কণ্ঠ
  • আপডেট সময় : ০৪:২৪:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার এক বিলের পানিতে পাওয়া গেল মাত্র পাঁচ মাস বয়সী যমজ দুই কন্যাশিশুর মরদেহ। এই বিভীষিকাময় ঘটনার পেছনে ছিল তাঁদের জন্মদাত্রী মায়েরই নির্মম সিদ্ধান্ত। পুলিশের তদন্ত শেষে বুধবার (৯ জুলাই) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শান্তা বেগম (২২) নামের ওই নারী।

শান্তার ভাষ্যমতে, প্রায় দুই বছর আগে সোহাগ শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শুরুতে সম্পর্ক ভালো থাকলেও গর্ভধারণের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। যমজ কন্যাসন্তান জন্মের পর তিনি বাবার বাড়িতে চলে যান এবং সেখানেই থাকতেন। কিছুদিন আগে স্বামী সোহাগ তাঁকে সন্তানদের নিয়ে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে বলেন। তবে ফিরে যাওয়ার পর থেকে সোহাগ বাজার না করা, দুধ না আনা, এমনকি সন্তানদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে না দেওয়ার মতো অবহেলা করতে থাকেন। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো, এবং মাঝেমধ্যে সোহাগ তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।

শান্তার ভাষ্যে, ঘটনার দিন বিকালে সোহাগের সঙ্গে আবার তর্ক হয় এবং সে ফোনে সন্তানদের দুধ আনতে বললে, সোহাগ ক্ষেপে উঠে বলে—“তোর মেয়ে, তুইই সামলাবি, আমি কিছু করব না।” এই কথায় শান্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

রাগের মাথায় প্রথমে ছোট মেয়ে সামিয়াকে, এরপর বড় মেয়ে লামিয়াকে বাড়ির পাশের বিলের পানিতে ফেলে দেন তিনি। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। কিছু সময় পর তিনি আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বলেন, “সোহাগ আমার বাচ্চাদের পানিতে ফেলে দিয়েছে।” উদ্দেশ্য ছিল—স্বামীকে ফাঁসানো।

তবে পুলিশি তদন্তে ঘটনা ভিন্ন মোড় নেয়। শিশুদের পানিতে ফেলার সময় সোহাগ কোথায় ছিলেন, তা মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে জানা যায়—তিনি তখন বাজারে ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজেও তার বাজারে থাকার প্রমাণ মেলে।

পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনিই তাঁর সন্তানদের হত্যা করেছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সংসারজীবনে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। যমজ সন্তানের জন্মের পর বাড়ে অর্থনৈতিক চাপ। শান্তা ও সোহাগের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালমান রহমান জানান, “শিশুদের মৃত্যুর সময় সোহাগ বাড়িতে ছিলেন না, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। শান্তা তার স্বামীকে ফাঁসাতে মিথ্যা বললেও শেষমেশ নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।”

তিনি আরও জানান, সোহাগ কন্যা সন্তান হওয়ায় উদাসীন ছিলেন, দেখভাল করতেন না। এরই মাঝে পারিবারিক কলহ ও হতাশা শান্তাকে এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে ঠেলে দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মুন্সীগঞ্জে যমজ কন্যাশিশু হত্যা: স্বামীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের দায় স্বীকার করলেন মা

আপডেট সময় : ০৪:২৪:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার এক বিলের পানিতে পাওয়া গেল মাত্র পাঁচ মাস বয়সী যমজ দুই কন্যাশিশুর মরদেহ। এই বিভীষিকাময় ঘটনার পেছনে ছিল তাঁদের জন্মদাত্রী মায়েরই নির্মম সিদ্ধান্ত। পুলিশের তদন্ত শেষে বুধবার (৯ জুলাই) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শান্তা বেগম (২২) নামের ওই নারী।

শান্তার ভাষ্যমতে, প্রায় দুই বছর আগে সোহাগ শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শুরুতে সম্পর্ক ভালো থাকলেও গর্ভধারণের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। যমজ কন্যাসন্তান জন্মের পর তিনি বাবার বাড়িতে চলে যান এবং সেখানেই থাকতেন। কিছুদিন আগে স্বামী সোহাগ তাঁকে সন্তানদের নিয়ে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে বলেন। তবে ফিরে যাওয়ার পর থেকে সোহাগ বাজার না করা, দুধ না আনা, এমনকি সন্তানদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে না দেওয়ার মতো অবহেলা করতে থাকেন। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো, এবং মাঝেমধ্যে সোহাগ তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।

শান্তার ভাষ্যে, ঘটনার দিন বিকালে সোহাগের সঙ্গে আবার তর্ক হয় এবং সে ফোনে সন্তানদের দুধ আনতে বললে, সোহাগ ক্ষেপে উঠে বলে—“তোর মেয়ে, তুইই সামলাবি, আমি কিছু করব না।” এই কথায় শান্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

রাগের মাথায় প্রথমে ছোট মেয়ে সামিয়াকে, এরপর বড় মেয়ে লামিয়াকে বাড়ির পাশের বিলের পানিতে ফেলে দেন তিনি। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। কিছু সময় পর তিনি আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বলেন, “সোহাগ আমার বাচ্চাদের পানিতে ফেলে দিয়েছে।” উদ্দেশ্য ছিল—স্বামীকে ফাঁসানো।

তবে পুলিশি তদন্তে ঘটনা ভিন্ন মোড় নেয়। শিশুদের পানিতে ফেলার সময় সোহাগ কোথায় ছিলেন, তা মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে জানা যায়—তিনি তখন বাজারে ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজেও তার বাজারে থাকার প্রমাণ মেলে।

পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনিই তাঁর সন্তানদের হত্যা করেছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সংসারজীবনে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। যমজ সন্তানের জন্মের পর বাড়ে অর্থনৈতিক চাপ। শান্তা ও সোহাগের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালমান রহমান জানান, “শিশুদের মৃত্যুর সময় সোহাগ বাড়িতে ছিলেন না, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। শান্তা তার স্বামীকে ফাঁসাতে মিথ্যা বললেও শেষমেশ নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।”

তিনি আরও জানান, সোহাগ কন্যা সন্তান হওয়ায় উদাসীন ছিলেন, দেখভাল করতেন না। এরই মাঝে পারিবারিক কলহ ও হতাশা শান্তাকে এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে ঠেলে দেয়।