‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে লিগ্যাল নোটিশ, সাধারণ মানুষের প্রশ্ন: পর্নোগ্রাফি দেখে কে নোটিশ দেবে?

- আপডেট সময় : ০২:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫ ৮৯ বার পড়া হয়েছে
জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর পঞ্চম সিজনের কয়েকটি সংলাপ ও দৃশ্যকে কেন্দ্র করে নাটকের নির্মাতা কাজল আরেফিন অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই উদ্যোগ ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভ—কারণ, সমাজে আরও বড় বড় অনৈতিক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়লেও সেগুলোর বিরুদ্ধে দেখা যায় না তেমন কোনো আইনগত পদক্ষেপ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহি উদ্দিন এই লিগ্যাল নোটিশটি দেন। নোটিশে কাজল আরেফিন অমি ছাড়াও উল্লেখ করা হয়েছে অভিনেতা মারজুক রাসেল, জিয়াউল হক পলাশ, সাইদুর রহমান পাভেল, শিমুল শর্মা এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুম ফিল্মস-এর নাম।
নোটিশে বলা হয়, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫–এর ১ থেকে ৮ পর্বে এমন বহু সংলাপ রয়েছে যা “অশ্লীল, দ্ব্যর্থবোধক (ডাবল মিনিং)” এবং “তরুণ প্রজন্মের নৈতিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত” করছে। উদাহরণ হিসেবে ‘ডেট’, ‘উনিশ/বিশ’, ‘টাকা হলে শিশা খেতে পারতাম’, ‘বাঙালি পোশাক লুঙ্গি’, ‘ফিমেল’, ‘কিডনি’, ‘দই’ ইত্যাদি সংলাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
🎙️ নোটিশে দাবি ও হুঁশিয়ারি
নোটিশে আইনজীবী মহি উদ্দিন উল্লেখ করেন, এই নাটকে ব্যবহৃত কিছু ভাষা ও উপস্থাপন “জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪” এবং “জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭”-এর পরিপন্থী।
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এইসব কনটেন্ট শিশু-কিশোরদের মানসিক গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে নাটকের বিতর্কিত অংশগুলো ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিতে হবে, নইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
📣 সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া: “এরা কি ইউটিউব দেখে না?”
অবশ্য এই লিগ্যাল নোটিশ ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই মনে করছেন, এই উদ্যোগ একপাক্ষিক এবং সমাজের আরও গুরুতর অনৈতিকতার উৎসগুলোর দিকে চোখ বন্ধ রাখা হয়েছে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন:
“ইউটিউব, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে অজস্র পর্নোগ্রাফি, নগ্নতা, গালিগালাজ ছড়িয়ে পড়ছে। ওগুলোতে কেউ নোটিশ দেয় না, নাটকের একটা সংলাপ নিয়ে এতো হৈচৈ কেন?”
আরেকজন মন্তব্য করেছেন:
“একটা বিনোদনধর্মী নাটক নিয়েই যদি এতো সমস্যা হয়, তাহলে যারা সত্যিকারের পর্ন বা বিকৃত কনটেন্ট বানায়, তাদের বিরুদ্ধে তো পুরো সেনা লাগানো দরকার।”
🎬 নির্মাতার বক্তব্য ও নাটকের দর্শকবহুলতা
নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি এর আগেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
“ব্যাচেলর পয়েন্ট এখন সব বয়সী মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। নাটকে আমরা বাস্তব সমাজের কিছু রঙিন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করি।”
তবে লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, নাটকটি “পরিবারবান্ধব নয়” এবং এতে “সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
⚖️ মূল প্রশ্ন: আইনের নজর কি শুধুই জনপ্রিয় কনটেন্টে?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, দেশে অনলাইনে যেসব ওয়েব সিরিজ, শর্ট ফিল্ম কিংবা ইউটিউব কনটেন্ট প্রকাশিত হচ্ছে—যেগুলোর অনেকগুলোর বিষয়বস্তু ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর চেয়ে অনেক বেশি অশ্লীল বা সহিংস—সেগুলোর ব্যাপারে আইনজীবীরা কেন চুপ থাকেন?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অনিশ্চিত, তবে এটুকু পরিষ্কার—এটা কেবল নাটক নয়, একটি সংস্কৃতি যুদ্ধের বহিঃপ্রকাশ।
📌 সম্পাদকীয় মন্তব্য:
সৃষ্টিশীলতার স্বাধীনতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সামাজিক দায়িত্ববোধও জরুরি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ছোট ছোট ব্যতিক্রমী সংলাপের ওপর দৃষ্টি রেখে, বড় বড় অন্যায় অনুচ্চারিত থেকে যাবে।