দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতিহাস গড়া সিদ্ধান্ত: ট্রেনচালক কিম ইয়ং-হুন হলেন শ্রমমন্ত্রী

- আপডেট সময় : ০১:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়ায় নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে এক ট্রেনচালককে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং। কর্মজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এই সাহসী পদক্ষেপ দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষে চলতি বছরের ৩ জুন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হন প্রগতিশীল নেতা লি জে-মিয়ং। এরপরই তিনি মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যতিক্রমী ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৩ জুন) শ্রমমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান কোরিয়া রেলওয়ে কর্পোরেশনের রেল ইঞ্জিনিয়ার ও সাবেক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কিম ইয়ং-হুন।
বিশেষ মুহূর্তে চলছিল ট্রেন
প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, যখন কিম ইয়ং-হুনকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি বুসান থেকে সিউলগামী আইটিএক্স সেমাউল ট্রেনের ১০০৮ নম্বর ট্রেন চালাচ্ছিলেন। ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে বুসান স্টেশন ছাড়ে এবং সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে সিউলে পৌঁছায়। ট্রেন চলাকালীনই তিনি জানতে পারেন, তাকে দেশের নতুন শ্রমমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় ১১টি নতুন মুখের তালিকা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ কাং হুন-সিক। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন কিম ইয়ং-হুন, যিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কোরিয়ান কনফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নের (KCTU) সাবেক চেয়ারম্যান এবং কোরিয়ার বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম মুখপাত্র।
শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস
৫৭ বছর বয়সী কিম ইয়ং-হুন ১৯৯২ সালে কোরিয়া রেলওয়ে কর্পোরেশনে যোগ দেন। ২০০০ সালে তিনি বুসান শাখার শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান হন এবং ২০০৪ সালে পুরো রেলওয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন KCTU-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২০১৭ সালে তিনি জাস্টিস পার্টিতে (বর্তমানে ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি) যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখেন। তিনি ২০তম ও ২১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লি জে-মিয়ংয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
শ্রমিকবান্ধব উদ্যোগের প্রত্যাশা
প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, কিম ইয়ং-হুনের অভিজ্ঞতা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার দায়িত্বের মধ্যে থাকবে শ্রম দুর্ঘটনা কমানো, ‘হলুদ খাম আইন’ সংশোধন, এবং ৪.৫ দিনব্যাপী কর্মসপ্তাহ চালু করা।
নিজের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে হুন লেখেন, “আমি এমন একটি কোরিয়া গড়তে চাই, যেখানে শ্রমকে সম্মান জানানো হবে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এই প্রথম একজন ট্রেনচালক শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেন। এই সিদ্ধান্ত কেবল সামাজিক শ্রেণি ভেদাভেদ ভাঙার প্রতীকই নয়, বরং কর্মজীবী মানুষের জন্য সরকারে সরাসরি প্রতিনিধিত্বের এক বাস্তব উদাহরণ।