ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্যোগ, স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইন প্রয়োগ জোরদার

- আপডেট সময় : ০৮:৩৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে
অব্যাহত যানজটে নাকাল রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর যানজট নিরসন ও চলাচল সহজ করতে ডিএমপি একটি নতুন কর্মসূচি চালু করেছে, যার মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সংকটপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আনা হচ্ছে আধুনিক পরিবর্তন।
যানজটের পেছনের কারণ ও বর্তমান বাস্তবতা
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা শহরের অধিকাংশ সড়কেই দেখা যায় দীর্ঘ যানজট। অসংখ্য প্রাইভেট গাড়ি, রিকশা, বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলের চাপে রাস্তার ধারণক্ষমতা পেরিয়ে যাওয়ায় নাগরিক জীবনে ভোগান্তি এখন নিত্যদিনের বিষয়। যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় দেরি হয়, এবং জরুরি সেবাগুলোও বিপর্যস্ত হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, যানজটে শুধু সময় নয়, দেশের অর্থনীতিও বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে— প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
নতুন কর্মসূচির মূল বিষয়বস্তু
ডিএমপির নতুন কর্মসূচিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এগুলো হলো:
✅ আইন প্রয়োগে কড়াকড়ি
ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে
গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও জটপ্রবণ এলাকায় রেড জোন ঘোষণা করে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা
অবৈধ পার্কিং, উল্টো পথে চলা ও লাইসেন্সবিহীন যান চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার
✅ সড়ক সংস্কার ও পরিকাঠামো উন্নয়ন
সংকীর্ণ সড়কগুলোর সম্প্রসারণ ও সংস্কার শুরু
নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম বসানো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে
‘স্মার্ট জেব্রা ক্রসিং’ ও পথচারী ওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা
✅ স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার
ডিজিটাল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে যা সিসিটিভি ও সেন্সরভিত্তিক প্রযুক্তি দিয়ে যানজট পর্যবেক্ষণ করে
নগরবাসীকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রিয়েলটাইম ট্রাফিক তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে
চালকদের জন্য ‘বিকল্প রুট’ ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে
✅ সচেতনতা ও প্রচার অভিযান
চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ, ভিডিও প্রচার ও স্কুল-কলেজে সেমিনার আয়োজন
পথচারীদের জন্য সেফিটি ক্যাম্পেইন
গণপরিবহনের চালকদের প্রশিক্ষণ ও নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা
প্রশাসনের বক্তব্য
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মো. বি এম মোশাররফ হোসেন জানান,
“আমরা যানজট নিরসনে একসঙ্গে আইন প্রয়োগ, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সচেতনতা তিনটি ক্ষেত্রেই কাজ করছি। মানুষের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আমরা চাই নগরবাসী আমাদের পাশে থাকুক।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন,
“শুধু আইন প্রয়োগে নয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শহরকে প্রযুক্তিনির্ভর করেও যানজট কমানো সম্ভব। আমরা সেসব নিয়েই কাজ করছি।”
নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
নতুন এই পদক্ষেপে কিছুটা আশাবাদী রাজধানীবাসী। গুলিস্তানে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন,
“প্রতিদিন অফিসে যেতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। যদি স্মার্ট সিগন্যাল ও রুট নির্দেশনা কার্যকর হয়, তা হলে সময় বাঁচবে।”
তবে কেউ কেউ বলেছেন, শুধুমাত্র অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।