সর্বশেষ
বিশ্ব মঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘মানবপুতুল’ নৃত্য: ওসাকা এক্সপোতে যাচ্ছে ক্ষুদে শিল্পীরা পদ্মার ইলিশ কোথায় হারাল? স্বাদের রাজা এখন নাগালের বাইরে জোঁকের তেল: গোপন শক্তি না গোপন বিপদ? কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান? “বিয়ের জন্য আপনি প্রস্তুত তো? জেনে নিন চূড়ান্ত আত্মবিশ্লেষণের ৬টি দিক” আজ মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিএমপির ডাইভারশন নির্দেশনা—এড়িয়ে চলুন এই সড়কগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক ভিসায় নতুন শর্ত: আবেদনেই জমা দিতে হতে পারে ১৮ লাখ টাকার বন্ড টাঙ্গাইলে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেফতার রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর ফজলে এলাহী গ্রেফতার বিয়ে ছিল ফাঁদ! ৮ স্বামীকে ফাঁসিয়ে কোটি টাকা হাতানো সামিরা নবম বিয়ের আগেই গ্রেপ্তার প্রেমের ফাঁদে চা, তারপর অজ্ঞান! পাত্রী গ্রেপ্তার, জব্দ হওয়া মোবাইল গেল বাংলাদেশে

জোঁকের তেল: গোপন শক্তি না গোপন বিপদ? কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান?

প্রতিবাদী কণ্ঠ
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে

বাজারে হারবাল ও আয়ুর্বেদিক নানা তেলের ভিড়ে ‘জোঁকের তেল’ এখন এক আলোচিত নাম। বিশেষ করে পুরুষদের যৌন সমস্যা সমাধানের ‘ম্যাজিক ওয়েল’ হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে এটি। নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন বিজ্ঞাপনে দাবি করা হচ্ছে, জোঁকের তেল ব্যবহারে দ্রুত বাড়বে যৌন সক্ষমতা, টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং কর্মক্ষমতা। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে রয়েছে অজানা বিপদের ছায়া।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড দাবি করে, জোঁকের তেলে রয়েছে অশ্বগন্ধা, শতাবরী, মুসলি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদান, যা নাকি রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তবে চিকিৎসকদের মতে, এসব দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং, অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন ও অশুদ্ধ উপাদানে তৈরি তেল ত্বকে সৃষ্টি করতে পারে অ্যালার্জি, জ্বালা ও দীর্ঘমেয়াদী যৌন অক্ষমতার মতো জটিলতা।

এ প্রসঙ্গে স্কিনেজ ডার্মাকেয়ারের চীফ কনসালটেন্ট ডা. তাসনিম তামান্না হক বলেন, “জোঁকের থেরাপি বা হিরুডোথেরাপি ইতিহাসে প্রচলিত ছিল, যেখানে জীবিত জোঁক ব্যবহার করা হতো। কিন্তু জোঁকের তেল নিয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি নেই।” তিনি আরও জানান, এই তেল ব্যবহারে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কন্ট্রা-ইন্ডিকেশন।

কাদের জন্য বিপজ্জনক এই তেল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার-পরবর্তী কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীরা এই তেল একেবারেই ব্যবহার করতে পারবেন না।
তাছাড়া যারা ওয়ারফারিন বা ব্লাড থিনিং ওষুধ গ্রহণ করছেন, রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না এমন রোগী (হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, লিভার ডিজিজ) এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি বা সন্দেহভাজনদের জন্য এটি মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।

ডা. তাসনিম জানান, “বাংলাদেশে জোঁকের তেলের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনও এ পণ্যের জন্য নেই। তাই বাজারে যেসব তেল পাওয়া যায়, তা কীভাবে তৈরি হয়, কী উপাদান মেশানো হয়—সে বিষয়ে কোনও মনিটরিং বা নিশ্চয়তা নেই।”

এমনকি এসব তেলে স্টেরয়েড বা যৌন উদ্দীপক রাসায়নিক মেশানো থাকতে পারে, যা থেকে হতে পারে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—যেমন এলার্জি, সেলুলাইটিস, কুশিং সিন্ড্রোম বা এড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সি।

চূড়ান্ত পরামর্শ
চিকিৎসকদের পরামর্শ, “তেলটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল কিংবা যারা যৌন সমস্যার প্রকৃত কারণ জানেন না, তাদের জন্য এটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”

সুতরাং, জোঁকের তেলের প্রচার দেখে না ভেবে ব্যবহার নয়—বিজ্ঞানসম্মত তথ্য ও চিকিৎসকের পরামর্শই হোক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জোঁকের তেল: গোপন শক্তি না গোপন বিপদ? কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান?

আপডেট সময় : ০৫:৫৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

বাজারে হারবাল ও আয়ুর্বেদিক নানা তেলের ভিড়ে ‘জোঁকের তেল’ এখন এক আলোচিত নাম। বিশেষ করে পুরুষদের যৌন সমস্যা সমাধানের ‘ম্যাজিক ওয়েল’ হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে এটি। নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন বিজ্ঞাপনে দাবি করা হচ্ছে, জোঁকের তেল ব্যবহারে দ্রুত বাড়বে যৌন সক্ষমতা, টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং কর্মক্ষমতা। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে রয়েছে অজানা বিপদের ছায়া।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড দাবি করে, জোঁকের তেলে রয়েছে অশ্বগন্ধা, শতাবরী, মুসলি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদান, যা নাকি রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তবে চিকিৎসকদের মতে, এসব দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং, অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন ও অশুদ্ধ উপাদানে তৈরি তেল ত্বকে সৃষ্টি করতে পারে অ্যালার্জি, জ্বালা ও দীর্ঘমেয়াদী যৌন অক্ষমতার মতো জটিলতা।

এ প্রসঙ্গে স্কিনেজ ডার্মাকেয়ারের চীফ কনসালটেন্ট ডা. তাসনিম তামান্না হক বলেন, “জোঁকের থেরাপি বা হিরুডোথেরাপি ইতিহাসে প্রচলিত ছিল, যেখানে জীবিত জোঁক ব্যবহার করা হতো। কিন্তু জোঁকের তেল নিয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি নেই।” তিনি আরও জানান, এই তেল ব্যবহারে রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কন্ট্রা-ইন্ডিকেশন।

কাদের জন্য বিপজ্জনক এই তেল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার-পরবর্তী কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীরা এই তেল একেবারেই ব্যবহার করতে পারবেন না।
তাছাড়া যারা ওয়ারফারিন বা ব্লাড থিনিং ওষুধ গ্রহণ করছেন, রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না এমন রোগী (হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, লিভার ডিজিজ) এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি বা সন্দেহভাজনদের জন্য এটি মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।

ডা. তাসনিম জানান, “বাংলাদেশে জোঁকের তেলের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনও এ পণ্যের জন্য নেই। তাই বাজারে যেসব তেল পাওয়া যায়, তা কীভাবে তৈরি হয়, কী উপাদান মেশানো হয়—সে বিষয়ে কোনও মনিটরিং বা নিশ্চয়তা নেই।”

এমনকি এসব তেলে স্টেরয়েড বা যৌন উদ্দীপক রাসায়নিক মেশানো থাকতে পারে, যা থেকে হতে পারে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—যেমন এলার্জি, সেলুলাইটিস, কুশিং সিন্ড্রোম বা এড্রিনাল ইনসাফিশিয়েন্সি।

চূড়ান্ত পরামর্শ
চিকিৎসকদের পরামর্শ, “তেলটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল কিংবা যারা যৌন সমস্যার প্রকৃত কারণ জানেন না, তাদের জন্য এটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”

সুতরাং, জোঁকের তেলের প্রচার দেখে না ভেবে ব্যবহার নয়—বিজ্ঞানসম্মত তথ্য ও চিকিৎসকের পরামর্শই হোক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তি।