গার্মেন্টস খাতে নতুন বেতন স্কেল নিয়ে তীব্র আন্দোলন: শ্রমিকদের দাবির মুখে অস্থিরতা

- আপডেট সময় : ০৮:২৯:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত গার্মেন্টস শিল্প আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে শ্রমিকদের আন্দোলনে। সরকার ও মালিকপক্ষের ঘোষিত নতুন বেতন স্কেল শ্রমিকদের এক বড় অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাদের দাবি, ঘোষিত বেতন কাঠামো বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও জীবনের ব্যয় বিবেচনায় একেবারেই অপ্রতুল।
বেতন কাঠামোতে অসন্তোষ
গার্মেন্টস শ্রমিকরা বলছেন, বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খরচ এতটাই বেড়েছে যে ঘোষিত নতুন বেতন দিয়ে একটি পরিবার চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বেতন ১২,৫০০ টাকা করলেও অনেক শ্রমিকই মনে করছেন, এটি তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তারা অন্তত ২০,০০০ টাকা ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের দাবি তুলেছেন।
আন্দোলনে উত্তাল শিল্পাঞ্চল
নতুন বেতন কাঠামোর ঘোষণার পর থেকেই ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলগুলোতে শুরু হয় শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ ও সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি জানাচ্ছেন। কিছু কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় মালিকপক্ষও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আলোচনা চলমান, সমাধানের আশ্বাস
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার ও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বৈঠকে বসেছেন এবং শ্রমিকদের উদ্বেগ ও দাবির বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রভাবের আশঙ্কা
গার্মেন্টস খাতে কোনো ধরনের অস্থিরতা হলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে থাকে, যা দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ। এই খাতের স্থিতিশীলতা না থাকলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা কমে যেতে পারে এবং দেশীয় শ্রমবাজারে চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ
শ্রমিকরা বলছেন, তারা দেশ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। তাই তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষের দায়িত্ব। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা ছাড়া তারা কাজ করতে রাজি নন।
আন্দোলনরত এক শ্রমিক জানান, “আমরা কষ্ট করি, ঘাম ঝরাই। কিন্তু মাস শেষে ঠিকমতো সংসার চালানো যায় না। আমরা চাই সরকার আমাদের কষ্ট বুঝুক।”
সরকার ও মালিকপক্ষ যদি শ্রমিকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়, তবে গার্মেন্টস খাতের কর্মদক্ষতা ও রপ্তানি সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে দ্রুত একটি সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।