কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলা, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

- আপডেট সময় : ০১:১৯:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখার ঘটনায় তীব্র জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরও প্রধান আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সোমবার (৭ জুলাই) সকালে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রামে কুমিল্লা-বাগড়া সড়কের পাশে আয়োজিত এই মানববন্ধনে নিহতের পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শতাধিক গ্রামবাসী অংশ নেন।
ঘটনার পটভূমি
নিহত ফেরদৌসী বেগম সৌদি প্রবাসী সামছুল আলমের স্ত্রী। গত ২৭ জুন হঠাৎ নিখোঁজ হন তিনি। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে ১ জুলাই সকালে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে পচাগলা ও বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহটি চুপিসারে বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলে রাখা হয় সেপটিক ট্যাংকে।
আসামিরা চিহ্নিত, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং এতে জড়িত রয়েছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা সরাসরি দায়ী করেন প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম, আনোয়ার হোসেন, রুবেল আহমেদ মিন্টু এবং মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন জিল্লুকে। এদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
সোমবার সকাল ১০টার দিকে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা সড়কে অবস্থান নেন। ‘ফেরদৌসীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘অপরাধীদের গ্রেপ্তার করো’, ‘মাদকসেবীদের রক্ষা নয়, বিচার চাই’—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজাপুরের আকাশ-বাতাস।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহত ফেরদৌসীর বাবা শামসুল আলম, দেবর আলমগীর হোসেন ও ছেলে ইকরাম হোসেন। তারা বলেন, “আমার মেয়ের কোনো শত্রু ছিল না। এলাকার মাদকসেবীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। অথচ পুলিশ এখনো কাউকে ধরেনি। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
এছাড়া বক্তব্য রাখেন জামায়াত নেতা অধ্যাপক মো. আবদুল আওয়াল, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ ও নোয়াব মিয়া মাস্টার। বক্তারা প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
মাদকের রাজত্ব, প্রশাসনের নীরবতা
স্থানীয়দের দাবি, দক্ষিণগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি মাদকচক্র সক্রিয়। এই চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন বরাবরই নিরব ভূমিকা পালন করছে। অনেকের মতে, ফেরদৌসী বেগম হয়তো কোনো অপরাধের সাক্ষী ছিলেন, যে কারণে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি
আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার
এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান,নিহতের পরিবারকে সরকারি সহায়তাশেষ কথা ,ফেরদৌসী বেগম হত্যাকাণ্ড কুমিল্লার একটি অজ পাড়াগাঁয়ে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যার এক ভয়াবহ উদাহরণ। আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে—এমন শঙ্কাই প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে।