কনে না দেখানোর জেরে ঘটককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার হবু বর

- আপডেট সময় : ০১:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে
চাঁদপুরে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে—দুই দফায় মোট ১০ হাজার টাকা নেওয়ার পরও কনে দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এক হবু বর ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটক হাবিব উল্লাহকে পিটিয়ে ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছেন। নিহত হাবিব পেশায় একজন রিকশাচালক ছিলেন। অভিযুক্ত হবু বর কামাল মীরাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
মরদেহ উদ্ধার ও তদন্ত
১১ জুলাই সকাল ১১টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে একটি পুকুর থেকে হাবিব উল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী অজ্ঞাতদের আসামি করে মতলব উত্তর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকা থেকে কামাল মীরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বরিশালের চরমোনাই রাজারচর গ্রামের বাসিন্দা।
পরিচয় ও ঘটনার শুরু
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তিন-চার মাস আগে হাবিবের সঙ্গে কামালের পরিচয় হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে রিকশা চালাতেন হাবিব; আর কামাল কাজ করতেন ডেমরার কোনাপাড়া এলাকার একটি ছাপাখানায় নৈশপ্রহরী হিসেবে। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন কামাল। তখনই হাবিব তাকে পাত্রী দেখিয়ে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রথমে ৬ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে আবার ৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
প্রতারণা থেকে মৃত্যু
১০ জুলাই কামালকে মেয়ে দেখানোর আশ্বাসে হাবিব মতলব উত্তর থানাধীন এলাকায় নিয়ে যান। ওই দিন সন্ধ্যায় তারা ঘোরাঘুরি শেষে শাহ সোলেমান লেংটার মাজারে যান। সেখান থেকে রাত ১১টার দিকে গোপালকান্দি বিদ্যালয়ের পাশের পুকুরপাড়ে বসেন তারা। কনে না দেখিয়ে শুধু সময় নষ্ট করায় কামাল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করে পুকুরপাড়ের সিঁড়িতে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে কামাল হাবিবকে তলপেটে ও অণ্ডকোষে লাথি মারেন এবং পরে দুর্বল হাবিবকে পানিতে চুবিয়ে ধরেন।
শেষ চেষ্টা
পুলিশ সুপার জানান, চূড়ান্ত মুহূর্তে হাবিব আত্মরক্ষার চেষ্টা করে কামালের ডান হাতের দুই আঙুলে কামড় দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে কামাল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে ছিলেন।
পুলিশি তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ
প্রথমে হত্যাকাণ্ডের কোনো সুস্পষ্ট ক্লু না পেলেও, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে। গ্রেপ্তারকৃত কামাল মীরাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং হত্যার ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।