ইরানের ইউরেনিয়াম সরানো নিয়ে ধোঁয়াশা, বিভ্রান্ত মার্কিন গোয়েন্দা মহল

- আপডেট সময় : ০১:৫১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহলে। সাম্প্রতিক মার্কিন বিমান হামলার আগে ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও পরমাণবিক উপকরণ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে চরম ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রধান জেনারেল ড্যান কেইনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, “ইরানের ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, বা কোথায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে—সেসব বিষয়ে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য নেই।”
বিভ্রান্তি ও উপাত্ত ঘাটতির ইঙ্গিত
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে কী ধরনের সরঞ্জাম ছিল এবং হামলার পর কী অবস্থায় আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ। তবে হামলার পর উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, ফোরদো কেন্দ্রের বাইরে অসংখ্য ট্রাক অবস্থান করছে, যা ইউরেনিয়াম বা প্রযুক্তি স্থানান্তরের আভাস দেয়।
ইরানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট। তিনি আরও বলেন, ইউরেনিয়াম এমন স্থানে সরানো হয়েছে যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল বা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার নজরে নেই।
তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা ও প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা—এমন ইঙ্গিত দেওয়া হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, “এ ধরনের প্রশ্ন হামলার সাফল্যকে খাটো করার অপচেষ্টা।” তিনি জানান, ফোরদোতে মার্কিন অভিযান ছিল ‘ঐতিহাসিক’ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
তবে নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, “ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর গুরুতর ক্ষতি হয়নি, কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে মাত্র।” বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে হেগসেথ বলেন, “এসব তথ্য কম নির্ভরযোগ্য। বাস্তবতা হলো, ইরানকে এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বছর লেগে যাবে।”
‘গোপন সফলতা’র দাবি ট্রাম্প সরকারের
সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফের বক্তব্য উল্লেখ করে হেগসেথ বলেন, “এই অভিযানের সাফল্য গোয়েন্দা তথ্যেরও বাইরে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল এবং গোপন সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বড় সফলতা অর্জন করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “এই ঐতিহাসিক সাফল্য আমেরিকান জনগণের উদযাপন করা উচিত।”
উপসংহার:
যদিও ওয়াশিংটন ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করার দাবি করছে, তবে ইউরেনিয়াম সরানো নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের অস্পষ্টতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পারমাণবিক কর্মসূচি, গোয়েন্দা তথ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে কেন্দ্র করে জটিলতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।