সকালে গাঢ় হলুদ প্রস্রাব: স্বাভাবিক নাকি স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত?

- আপডেট সময় : ০১:২৯:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
বিস্তারিত প্রতিবেদন:
প্রস্রাব বা মূত্র আমাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক ও গুরুত্বপূর্ণ নিঃসরণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের হয়ে যায়। তবে অনেকেই খেয়াল করে থাকেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমবার প্রস্রাবের রঙ অন্য সময়ের তুলনায় গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে। অনেকের মনে এ নিয়ে উদ্বেগও দেখা দেয়—আসলে এটি কি স্বাভাবিক, নাকি কোনো সমস্যার লক্ষণ?
কেন সকালে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়?
🔸 পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন):
রাতে ঘুমের সময় দীর্ঘক্ষণ পানি না খাওয়ার ফলে শরীরে সাময়িক পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এতে কিডনি মূত্রকে বেশি ঘন করে ফেলে, ফলে প্রস্রাবে উপস্থিত ‘ইউরোক্রোম’ নামক একটি প্রাকৃতিক রঞ্জকের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা প্রস্রাবকে গাঢ় রঙের করে তোলে।
🔸 ইউরোক্রোমের প্রভাব:
হিমোগ্লোবিন ভেঙে যাওয়ার সময় তৈরি হয় ইউরোক্রোম। শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে এই রঞ্জকের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের রঙ আরও গাঢ় দেখা যায়।
🔸 ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের প্রভাব:
বিশেষ করে বি-কমপ্লেক্স (যেমন: ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন) বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে প্রস্রাবের রঙ উজ্জ্বল হলুদ বা নিয়ন হলুদ হয়ে যেতে পারে। সকালের দিকে মাল্টিভিটামিন সেবনের পর এ ধরনের রঙ পরিবর্তন অস্বাভাবিক নয়।
কখন সতর্ক হবেন?
✅ সারাদিন পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার পরও যদি প্রস্রাব গাঢ় রঙের থাকে, তাহলে তা হতে পারে গভীর ডিহাইড্রেশনের ইঙ্গিত।
✅ প্রস্রাবে তীব্র দুর্গন্ধ, জ্বালাপোড়া, তলপেটে ব্যথা, জ্বর, গাঢ় বাদামি বা লালচে রঙ, অতিরিক্ত ফেনা থাকলে তা হতে পারে কিডনি সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)-এর লক্ষণ।
✅ কখনো কখনো যৌনবাহিত রোগ বা অণ্ডকোষজনিত জটিলতা থেকেও প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।
করণীয় কী?
✔️ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
✔️ প্রস্রাবের রঙ, গন্ধ, পরিমাণ ও অন্যান্য লক্ষণের দিকে নিয়মিত নজর রাখুন।
✔️ দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বা বারবার লক্ষণ দেখা দিলে নিজের থেকে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার:
সকালের হলুদ প্রস্রাব সবসময় উদ্বেগের বিষয় নয়। বেশিরভাগ সময় এটি পানির ঘাটতির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ থাকলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শরীরের প্রতিটি সংকেতকে গুরুত্ব দিন—সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।