ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে: প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি কার্যকর হয়নি, মামলাটি এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন

- আপডেট সময় : ০৮:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া “প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি সাত দিনের মধ্যে কার্যকর” — এমন শিরোনামের সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ‘ফ্যাক্টওয়াচ’। সংস্থাটি বলছে, মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মামলা এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন। সুতরাং বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের প্রশ্নই ওঠে না।
উচ্চ আদালতের অনুমোদন ছাড়া ফাঁসি কার্যকর নয়
আইন অনুযায়ী, কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, যা “ডেথ রেফারেন্স” নামে পরিচিত। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনের সুযোগ পান। সাধারণত এসবের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়।
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় বিচারিক রায় ঘোষণার পর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পৌঁছে এবং তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। একই বছর আসামিরাও আপিল করেন। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগির হোসেনের সমন্বয়ে একটি দ্বৈত বেঞ্চ গঠন করে হাইকোর্ট।
চলমান শুনানি ও ‘ভুল ব্যাখ্যা’র বিষয়
২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে এই বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়, যা এখনো চলমান। রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার জানান, ২৩ মে পর্যন্ত মোট ১৪ দিন শুনানি হয়েছে। তিনি বলেন, “আদালতে বিচারিক রায়ের অংশ পাঠের সময় কেউ ভুলভাবে বুঝে হয়তো ফাঁসি কার্যকরের গুজব ছড়িয়েছে। এটি মোটেও সঠিক নয়।”
তিনি আরও জানান, এখনো রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক থেকে শুনানি করছে, চূড়ান্ত রায় দেয়ার পর্যায়ে পৌঁছানো হয়নি। ফলে ফাঁসি কার্যকরের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পূর্বনিয়ম
রীতিমাফিক, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে সকল বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের ডেকে শেষবার সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়াও এখনো শুরু হয়নি।
পেছনের ঘটনা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। ঘটনার পর তার বোন ৫ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেন; ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে খালাস দেন।
উপসংহার
ফ্যাক্টওয়াচ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তথ্য সঠিক নয়। মামলা এখনো বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
তথ্য যাচাই ছাড়া বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।